গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১০ ঘণ্টায় অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। তবে তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৪ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, এর আগে সকাল ৮টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি জেলার ফুলছড়ি পয়েন্টে ও ঘাঘট নদীর পানি জেলা সদরের ডেভিট কোম্পানি পাড়া পয়েন্টে অপরিবর্তিত ছিল। তবে তিস্তা নদীর পানি সুন্দরগঞ্জ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২৪ দশমিক ৪৯ সেন্টিমিটার এবং করতোয়ার নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ দশমিক ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এই জেলায় ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, গত ১০ ঘণ্টায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও বন্যা দুর্গত মানুষের কয়েকগুণ দুর্ভোগ বেড়েছে। প্রায় টানা এক সপ্তাহ ধরে চতুরদিক থৈ থৈ পানির কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বসত ঘরবাড়ি পানির নিচে থাকায় মানুষ বেডিবাঁধ ও উঁচু সড়কসহ বিভিন্ন জায়গার মাথা গুজে আছেন।
এছাড়াও সাড়ে ৩ হাজার মানুষ ২৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। সেখানে তারা গবাদি পশুর সাথে বসবাস করছেন। বন্যা দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট। তাদের অনেকের ঘরে খাবার নেই। ক্ষুধার জ্বালায় তারা অস্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেয়ে নানা জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকেই সরকারি ত্রাণ পেলেও শুকনা জায়গার অভাবে রান্না করতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তারা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে কলার ভেলায় রান্না করছেন। বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্যের জন্য হা হা কার চলছে। সেখানকার মানুষ ত্রাণের নৌকা দেখলেই ত্রাণ পাওয়ার আশার পানি ভেঙ্গে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া নৌকা যোগে উপজেলার হরিপুর চরাঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের জন্য যান। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় উত্তেজিত জনতা ত্রাণের নৌকাটি পানিতে ভাসিয়ে দেয়। অনাহারী মানুষ সামান্য ত্রাণের জন্য পানি ভেঙ্গে সেখান যান। একপর্যায়ে পানির মধ্যেই লাইন করে তাদের ত্রাণ দেওয়া হয়। পানির মধ্যে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকের ত্রাণের চাল পাননি।
গাইবান্ধা জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জানান, প্রশাসনের হাতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী রয়েছে। সুতরাং কোথাও কোন সমস্যা হবে না। এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী ভাবে ২শ’ ২৫ মেট্টিক টন চাল ও নগদ ৯০ লাখ টাকা এবং ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বন্যার্তদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তার মধ্যে থেকে ৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment